আজ, বৃহস্পতিবার


২৬শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পঞ্চগড় সীমান্তে ভারতের দখলে শত শত একর জমি, নিরব সংকটের প্রতিচ্ছবি

বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
পঞ্চগড় সীমান্তে ভারতের দখলে শত শত একর জমি, নিরব সংকটের প্রতিচ্ছবি
সংবাদটি শেয়ার করুন....
মেহেদী হাসান সেতু, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষা জেলা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া, সদর এবং বোদা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে। সীমান্ত নির্ধারণ সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় এসব এলাকায় ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) দখল করে রেখেছে শত শত একর জমি। স্থানীয়দের ভাষ্য, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষাবাদন ও বসবাস নির্ভর বহু পরিবার।
দখলে প্রায় ৭৩০ একর জমি 
স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণের তথ্য অনুযায়ী, তিনটি উপজেলায় মোট প্রায় ৭৩০ একর জমি বিএসএফ দখলে রেখেছে। এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাষা ইউনিয়নের সিংপাড়া ও খুদিপাড়া মৌজায় ৪৮৭ একর, বোদা উপজেলার বড় শশী ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ মৌজায় ৯৩ একর এবং তেতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে দর্জিপাড়া পর্যন্ত এলাকায় প্রায় ১৫০ একর জমি রয়েছে।

দখলের উৎস ও বর্তমান অবস্থা

ভারতের ফুলবাড়ি, মুড়িখাওয়া, নয়াবাড়ি, হাতিরাম, শিঙিমারী, বেরবাড়ি ও পাঠানপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পগুলো সরাসরি এসব জমির আশেপাশে অবস্থান করছে। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের সীমান্ত রক্ষীরা এসব জমির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। সীমান্ত ঘেঁষা করতোয়া, মহানন্দা ও সুই নদীর তীরবর্তী জমির একাংশও এখন ভারতের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।

চাষাবাদে বাধা ও নির্যাতনের অভিযোগ

নোম্যানস ল্যান্ডে কৃষি কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বহুবার বাধার সম্মুখীন হয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। কখনো গুলি, কখনো শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক কৃষক বলেন, “আমরা আমাদের জমিতে হাল চাষ করতে গেলে বিএসএফ গুলি ছোড়ে বা ধাওয়া দেয়। জমিতে ঢুকতে পারি না। অথচ দলিল অনুযায়ী এগুলো বাংলাদেশের জমি।”

সম্প্রতি মহানন্দা নদীর কাশেমগঞ্জ সীমান্তে প্রায় ১৫০ একর জমি নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিজিবির হস্তক্ষেপে আংশিক জমি ফিরে পাওয়া গেলেও মূল সমস্যার সমাধান হয়নি।

ছিটমহল বিনিময় চুক্তির জটিলতা

২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের পর থেকে এই জমি বিরোধ নতুন রূপ নেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চুক্তির ফলে জমির দিক থেকে ভারত কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা সীমান্তের অমীমাংসিত জমিগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাচ্ছে। এতে স্থানীয় জনজীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক।

সমাধানে কার্যকর উদ্যোগের দাবি

সীমান্তবাসী এবং ভূমি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সীমান্ত নির্ধারণ করলে অনেক জমিই বাংলাদেশ ফেরত পেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রোন, জিপিএস এবং স্যাটেলাইট ম্যাপিং-এর মাধ্যমে একটি যৌথ উদ্যোগে পুনর্মাপ ও সীমান্ত নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি।

স্থানীয় অধিবাসীদের প্রস্তাব, যদি এসব জমি পুনরুদ্ধার করা যায়, তবে তা ভূমিহীন, প্রান্তিক ও অসহায় মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে।

সরকারের প্রতি আহ্বান

সীমান্ত এলাকার মানুষ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—দেশের ভূখণ্ড রক্ষা, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব জমির স্থায়ী সমাধান করতে। এ বিষয়ে কূটনৈতিকভাবে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্ত কমিশনের নিয়মিত বৈঠক ও যৌথ জরিপ কার্যক্রম চালানোর প্রয়োজনীয়তাও উঠে এসেছে।
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:১৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

দৈনিক গণবার্তা |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদকঃ শাহিন হোসেন

সহকারী সম্পাদকঃ মোঃ শাহ পরান হাওলাদার

বিপিএল ভবন (৩য় তলা ) ৮৯, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা ।

মোবাইল : ০১৭১৫১১২৯৫৬ ।

ফোন: ০২-২২৪৪০০১৭৪ ।

ই-মেইল: ganobartabd@gmail.com